একটি অন্যরকম ভালোবাসা। পার্ট:-2
#পার্ট -২
তিতলীকে পড়াচ্ছি প্রায় এক মাস হয়ে গেলো বুদ্ধিমান একটা মেয়ে , অল্প একটু বললেই বুঝে ফেলে সমস্যা খালি একটাই , খুব বেশী কথা বলে মেয়েটা আমি নিজে একটু চুপচাপ স্বভাবের তাই বেশী কথা বলা মানুষদের একটু কমই পছন্দ করি কিন্তু তাও কেনো যেনো মেয়েটার উপর একটা মায়া জন্মে গেছে এই এক মাস এ আমার নিজের কোনো আপন বোন নেইদুই ভাই এর মাঝে আমিই বড় তাও আবার ছোট ভাইয়ের সাথে প্রায় ১২ বছরের গ্যাপ একটা বোনের অভাব সবসময়ই অনুভব করিএ জন্যই বোধহয় তিতলীর উপর মায়া নামক বস্তুটার জন্ম হয়েছে
আমাকে ও ইউনিক আর ইনোভেটিভ ভাবেই জ্বালাত বলা যায়একদিন পড়াচ্ছিলাম "I go to school by school bus" সাথে সাথেই সে ক্ষেপে উঠলো
না সার-ভাইয়া , আমি একদমই স্কুল বাসে যাইনা , আমি আমাদের গাড়িতে করেই যাই যতোই বোঝানোর চেস্টা করলাম তাকে , ততই চেস্টা বিফলে গেলো
মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করতো তিতলীএকদিন জিজ্ঞেস করলো"আচ্ছা সার-ভাইয়া , আমি এতো কথা বলি কেনো বলোতো ??? "
চুপচাপ শুনে যেতাম ওর কথাগুলোউত্তর দিতাম নাখালি মাথা নাড়াতামআমার মাথা নাড়ানো দেখে ও কি বুঝতো কে জানে
প্রথম মাসে বেতন টা নিতে গিয়েই সবচেয়ে বড় ধাক্কা টা খেলাম তিতলীর মায়ের কাছ থেকেকথায় কথায় তিনি বলে উঠলেন "বাবা ,আমি জানি তিতলী একটু বেশী কথা বলে সবাইকে জ্বালায় তুমি কিন্তু ওর কথায় কিছু মনে করো না মেয়েটা অসুস্থ তো তাই কিছু বলি না ওকে "
ভেবেছিলাম এমনিই হয়তো সাধারন কোনো অসুখ-বিসুখ এর কথা বলবে আন্টি তাই জিজ্ঞেস করলাম ওনাকে
" মেয়েটা জন্মাবার সময় হার্টে একটা ছিদ্র নিয়ে জন্মেছে , জন্মের সময়ই আমার একমাত্র মেয়েটা মৃত্যু হাতে নিয়ে দুনিয়ায় এলো "-বলেই উনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন
শান্তনা কিভাবে দিতে হয় জানি না ,তাও আবার একটা মা কে হাতে টাকার খাম টা নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না তখনচুপচাপ বসে দেখছিলাম একটা মা কিভাবে কাঁদে তার সন্তানের জন্য
কাঁদতে কাদতেই আন্টি ওর সম্পর্কে বললেনছিদ্র টা ধরা পরবার পর থেকেই অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে তিতলীকেকেউ আশ্বাস দিয়েছে , কেউ বলেছে আশা ছেড়ে দিতে তারপর ও ওর মা-বাবা আশা ছাড়েনিপ্রায় প্রতি মাসেই নতুন নতুন ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওকে ,চেকআপ করানো হচ্ছে কিন্তু সন্তুষ্ট করতে পারছে না কেউ তাদের আর এই ব্যাপার টা তিতলী নিজেও জানে(অবাক হলাম ভেবে , এইটুকুন একটা পিচ্চি বাচ্চা কি করে লুকিয়ে রাখতে পারে নিজের এতবড় অসুখের কথাটা)
কথাগুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে আন্টি নিজেই উঠে গেলেনচলে এলাম আমিও
এরপর থেকেই তিতলীর উপর মায়াটা আরো বেশী বেড়ে গেলো করুনা নাকি সহানুভুতি থেকে সেটা জানি না
নিজের আপন বোন ভেবেই ওর পাশে থাকা শুরু করলামও বুঝতে পেরেছিলো কিনা জানি না আমাকে "সার-ভাইয়া" বলে ডাকার অনুমতি ও নেয় নি, কিন্তু ওকে "তুই" বলে ডাকার অনুমতি টা নিয়েছিলাম ওর কাছ থেকেওর জন্য কিটক্যাট আর কমিক্স কিনে আনতে লাগলামআস্তে আস্তে চুপচাপ স্বভাবের এই আমি ওর মতই হয়ে যেতে লাগলাম
একদিন ওকে পড়ানোর সময় মানিব্যাগটা বের করে কি যেন খুজছিলাম হঠাত খেয়াল করে দেখি ও হোমওয়ার্ক বাদ দিয়ে উঁকি মেরে মানিব্যাগ এর দিকে তাকিয়ে আছেঅবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস ক্যান তুই"
মেয়েটা কি তোমার জিএফ সার-ভাইয়া?
ওর বাড়িয়ে দেয়া আঙ্গুলের দিকে খেয়াল করে দেখলাম ও আমার মানিব্যাগ এ রাখা জান্নাতের ছবিটা দেখাচ্ছে (বুঝতে পেরেই আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম, এতোটুকু মেয়ের গেসিং পাওয়ার দেখেও অবাক হলাম, অবশ্য ইংলিশ মিডিয়াম এর স্টুডেন্ট ,তার উপর এটা ২০১৪ সাল, সবই এখন টেকনোলজির উপর চলছেসেই জায়গায় এই মেয়ের এতোটুকু পাকনামো করাটা দোষের কিছুই না)
ওর মাথায় গাট্টা মেরে বললাম "পাকনামো বন্ধ কর , এটা কেউ না, তুই তোর কাজ কর"
নাছোড়বান্দা সেই বান্দর বই খাতা বন্ধ করে বললো "বলতেই হবে আমাকে,নাইলে পড়বো না"
উপায় না দেখে বললাম "হম, জিএফ"
তিতলী নাম জিজ্ঞেস করায় বললাম "তোর এই আপুটার নাম জান্নাত"
ও বললো "আমাকে আপুর সাথে দেখা করাবা সার-ভাইয়া"
ওর কথাটা শুনেই বুকের বাম পাশে চিনচিন করে উঠলো জান্নাতের সাথে ব্রেকাপের প্রায় ১৫ মাস পার হয়ে গিয়েছেও থাকতে পেরেছে ,আমি পারিনি ,প্রথম ভালোবাসা বলে কথা জান্নাতের সৃতিগুলো যত্ন করেই রেখে দিয়েছিলামসেই সুবাদেই মানিব্যাগ এ ওর ছবি রাখাআর সেটা দেখেই তিতলী জানতে চাইলো
অকে বললাম "শোন তিতলী , তোর এই আপুটা না হারিয়ে গেছে , ও ফেরার রাস্তা ভুলে গেছে,তাই আর কখনো ও ফিরবে না এ জন্যই ওর ছবিটা রেখে দিয়েছি আর ও যদি কখনো রাস্তা চিনে ফিরে আসে তাহলে তোর সাথে দেখা করিয়ে দেবো , ঠিক আছে পাগলী,এখন হোমওয়ার্ক কর মন দিয়ে" (এই মেয়েটা আমার অতোসব যাচ্ছেতাই অনুভূতির মানে বুঝবে কিনা তা না ভেবেই কতো কথা বলে ফেললাম)
আমি যখন হারিয়ে যাবো তখন আমার ছবিও কি রাখবা সার-ভাইয়া ? -জিজ্ঞাসু চোখে জানতে চাইলো ও
তিতলীর নিষ্পাপ চোখ দুটোর দিকে চেয়ে সেদিন কোন উত্তর দিতে পারিনি
সময় খুব দ্রুতই চলে যায় বোধহয়তিতলী কে পড়াচ্ছি আট মাস হয়ে গেছেতবে পড়ানোর চেয়ে ওর সাথে সময় কাটাই বেশি মাস শেষে টাকাটা নিতে খারাপই লাগে নিজের কাছে , মনে হয় ,মৃতপ্রায় একটা বাচ্চার দেখাশনা করে টাকা নিচ্ছিকিন্তু কিছু করার ও নেই আবেগ গুলো হেরে যায় বিবেকের কাছে প্রতিনিয়ত এর মাঝেই একবার তিতলী কে ইন্ডিয়া নিয়ে গিয়ে চেকআপ করিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে ফলাফল যে খুব একটা ভালো হয়নি সেটা আন্টি আর আঙ্কেল এর মুখ দেখেই বলে দেয়া যায় আর এর মাঝেই তিতলী আমাকে শুধুই "ভাইয়া" বলে ডাকা শুরু করেছেআজিব লাগলেও জিজ্ঞেস করিনি কিছু,বরং ওর মুখে এই ডাকটা শুনে বোন না থাকার অভাব টাও যেনো চলে গিয়েছিলো।
Comments
Post a Comment