কুরবানি ও এসময়ে করনীয় _ ইসলামী পোষ্ট :-6

কোরবানির গোশত কারা খেতে পারবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :— ‘অত:পর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দু:স্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও’[৪৬] রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন :— ‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর’ [৪৭] ‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নিতাই উলামায়ে কেরাম বলেছেন : কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব কোরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে‘কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’—বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছেতাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় তবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেনতিনি বলেছেন : সংরক্ষণ নিষেধ হওয়ার কারণ হল দুর্ভিক্ষদুর্ভিক্ষের সময় তিন দিনের বেশি কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করা জায়েজ হবে নাতখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করতে হবেআর যদি দুর্ভিক্ষ না থাকে তবে যতদিন ইচ্ছা কোরবানি দাতা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খেতে পারেন।তখন ‘সংরক্ষণ নিষেধ রহিত হওয়া’ সম্পর্কিত হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে।কোরবানির পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েজ নয়কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়া জায়েজ নয়হাদিসে এসেছে :— ‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না’ [৪৮] তবে দান বা উপহার হিসেবে কসাইকে কিছু দিলে তা না-জায়েজ হবে না করা কোন ভাবেই ঠিক নয় ১৫ আইয়ামুত-তাশরীক ও তার করণীয় আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয় কোরবানির পরবর্তী তিন দিনকেঅর্থাৎ যিলহজ মাসের এগারো, বারো ও তেরো তারিখকে আইয়ামুত-তাশরীক বলা হয়তাশরীক শব্দের অর্থ শুকানোমানুষ এ দিনগুলোতে গোশত শুকাতে দিয়ে থাকে বলে এ দিনগুলোর নাম ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বা ‘গোশত শুকানোর দিন’ নামে নামকরণ করা হয়েছে আইয়ামুত তাশরীক এর ফজিলত এ দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে যে সকল বিষয় এসেছে তা নীচে আলোচনা করা হল :— (১) এ দিনগুলো এবাদত-বন্দেগি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকির ও তার শুকরিয়া আদায়ের দিনআল্লাহ তাআলা বলেন :— ‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ [৪৯] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বোখারি রহ. বলেন :— ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন—‘নির্দিষ্ট দিনগুলো বলতে আইয়ামুত-তাশরীককে বুঝানো হয়েছে’ [৫০] ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন : ইবনে আব্বাসের এ ব্যাখ্যা গ্রহণে কারো কোন দ্বি-মত নেই[৫১] আর মূলত এ দিনগুলো হজের মওসুমে মিনাতে অবস্থানের দিনকেননা হাদিসে এসেছে— মিনায় অবস্থানের দিন হল তিন দিনযদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দু দিনে চলে আসে তবে তার কোন পাপ নেইআর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোন পাপ নেই[৫২] হাদিসে এসেছে— নাবীশা হাজালী থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জিকিরের দিন’[৫২] ইমাম ইবনে রজব রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় চমৎকার কথা বলেছেনতিনি বলেন : আইয়ামুত-তাশরীক এমন কতগুলো দিন যাতে ঈমানদারদের দেহের নেয়ামত ও স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের নেয়ামত তথা স্বাচ্ছন্দ্য একত্র করা হয়েছেখাওয়া- দাওয়া হল দেহের খোরাক আর আল্লাহর জিকির ও শুকরিয়া হল হৃদয়ের খোরাকআর এভাবেই নেয়ামতের পূর্ণতা লাভ করল এ দিনসমূহে[৫৪] (২) আইয়ামুত-তাশরীকের দিনগুলো ঈদের দিন হিসেবে গণ্যযেমন হাদিসে এসেছে— ‘সাহাবি উকবাহ ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলে কারীম স. বলেছেন: আরাফাহ দিবস, কোরবানির দিন ও মিনার দিন সমূহ (কোরবানি পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলাম অনুসারীদের ঈদের দিন’ [৫৫] (৩) এ দিনসমূহ যিলহজ মাসের প্রথম দশকের সাথে লাগানোযে দশক খুবই ফজিলতপূর্ণতাই এ কারণেও এর যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে (৪) এ দিনগুলোতে হজের কতিপয় আমল সম্পাদন করা হয়ে থাকেএ কারণেও এ দিনগুলো ফজিলতের অধিকারী আইয়ামুত তাশরীকে করণীয় এ দিনসমূহ যেমনি এবাদত-বন্দেগি, জিকির-আযকারের দিন তেমনি আনন্দ-ফুর্তি করার দিনযেমন রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :‘আইয়ামুত-তাশরীক হল খাওয়া-দাওয়া ও আল্লাহর জিকিরের দিন’[৫৬] এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দেয়া নেয়ামত নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার মাধ্যমে তার শুকরিয়া ও জিকির আদায় করা জিকির আদায়ের কয়েকটি পদ্ধতি হাদিসে এসেছে *.(১) সালাতের পর তাকবীর পাঠ করাএবং সালাত ছাড়াও সর্বদা তাকবীর পাঠ করাএ তাকবীর আদায়ের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ দিতে পারি যে এ দিনগুলো আল্লাহর জিকিরের দিনআর এ জিকিরের নির্দেশ যেমন হাজীদের জন্য তেমনই যারা হজ পালনরত নন তাদের জন্যও *.(২) কোরবানি ও হজের পশু জবেহ করার সময় আল্লাহ তাআলার নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করা *.(৩) খাওয়া-দাওয়ার শুরু ও শেষে আল্লাহ তাআলার জিকির করাআর এটা তো সর্বদা করার নির্দেশ রয়েছে তথাপি এ দিনগুলোতে এর গুরুত্ব বেশি দেয়াএমনিভাবে সকল কাজ ও সকাল-সন্ধ্যার জিকিরগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া *.(৪) হজ পালন অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপের সময় আল্লাহ তাআলার তাকবীর পাঠ করা *.(৫) এ গুলো ছাড়াও যে কোন সময় ও যে কোন অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা।

Comments

Popular posts from this blog

বৈদ্যুতিক ফ্যান আস্তে চালালে বিদ্যুৎ খরচ কম আর জোরে চালালে কি বেশি খরচ হয়?

Custom Rom(কাষ্টম রম) কি? কিভাবে নিজেই এন্ড্রোয়েড এ কাস্টম রম ইন্সটল করবেন।।।

Best Custom ROM for Xiaomi Redmi Note 8