রহস্যে ঘেরা টাইটানিকের গল্প।

টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার শত বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এ নিয়ে মানুষের আগ্রহ এতটুকুও কমেনি।জাহাজটি কেন ডুবেছিল তার রয়েছে রোমাঞ্চকর নানা কাহিনী।এ রহস্যের উদঘাটন করতে গিয়ে আমেরিকান চলচ্চিত্রকার জেমস ক্যামেরন তো ছবিই বানিয়ে ফেললেন।বিখ্যাত গায়িকা সেলেন ডিওনের সেই বিখ্যাত গান 'মাই হার্ট উইল গো অন' আজও নস্টালজিক করেলিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট জুটির অসাধারণ অভিনয় টাইটানিক ট্র্যাজেডিকে অত্যন্ত বাস্তবভাবেই ফুটিয়ে তুলেছিল।টাইটানিকের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সালের আজকের দিনে।ব্রিটিশ শিপিং কোম্পানি হোয়াইট স্টার লাইনের মালিকানাধীন টাইটানিকের পূর্ণ নাম ছিল আরএমএস টাইটানিক।ইউনাইটেড কিংডমের বেলফাস্টের হরল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ শিপইয়ার্ডে এ জাহাজটি তৈরি করা হয়।মার্কিন ধনকুবের পিয়ারপন্ট মর্গান এবং ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোম্পানির অর্থায়নে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।তখনকার দিনে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়।মজার ব্যাপার হলো শুরুর মতো এর শেষটাও ছিল ৩১ মার্চ।সন ছিল ১৯১২।জাহাজটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৮৮২ ফুট এবং প্রস্থ ৯২ ফুট।ওজন ছিল প্রায় ৪৬৩২৮ লং টন।পানি থেকে ডেকের উচ্চতা ছিল ১৮ মিটার।জাহাজটি একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি লোক বহন করতে পারত।চাকচিক্যের দিক থেকে তখনকার সব জাহাজকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল টাইটানিক।কী ছিল না এই প্রমোদতরীতে! সৃদুশ্য সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, স্কোয়াশ খেলার কোর্ট, ব্যয়বহুল ক্যাফে, সুবিশাল লাইব্রেরি ও লিফটের ব্যবস্থা সবই ছিল।টাইটানিকের ফার্স্টক্লাস যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্যাকেজটিতে আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করতেই ব্যয় করতে হতো তখনকার ৪৩৫০ ডলার যা বর্তমান বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ লাখ টাকারও বেশি।কমান্ডার অ্যাডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ২২২৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে জাহাজটি।১৪ এপ্রিল রাতে সমুদ্রের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যায়।চারদিকের আকাশ বেশ পরিষ্কার ছিল।পর্যবেক্ষণকারীরা সরাসরি টাইটানিকের সামনে একটি আইসবার্গ দেখতে পান।ফার্স্ট অফিসার জাহাজটিকে একটু বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দিয়েও তা রক্ষা করতে পারেননি।ঘটে যায় সমুদ্র যাত্রার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।টাইটানিকের ডোবার সময় মাউন্ট ট্যাম্পল, ফ্রাঙ্কফুট এবং টাইটানিকের সহোদর অলিম্পিকসহ অনেক জাহাজই সাহায্যের জন্য সেদিন এগিয়ে এসেছিল।টাইটানিকে সেদিন ফার্স্টক্লাসের যাত্রী ছিল ৩২৫ জন।এর মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ১৩০।সেকেন্ড ক্লাসে ২৮৫ যাত্রীর মধ্যে বেঁচে ছিলেন ১১৯ জন।থার্ড ক্লাসে ৭১০ জন যাত্রীর মধ্যে মারা যান ৫৩৬ এবং জাহাজের ৮৯৯ ক্রুর মধ্যে জীবিত ছিলেন ৭০৬ জন।অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।এ ঠাণ্ডা এতই ছিল যে, সেখানে কোনো মানুষ ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে মারা যেত।জাহাজটি প্রায় ৬৪টি লাইফবোট বহন করতে সক্ষম ছিল যা প্রায় ৪ হাজার লোক বহন করতে পারত।ব্রিটিশ নীতিমালা অনুসারে ১০ হাজার টনের বেশি ভারী জাহাজকে কমপক্ষে ১৬টি লাইফবোট নিতে হতো।টাইটানিক আইনগতভাবে যত লাইফ বোর্ড নেওয়া দরকার তার চেয়েও বেশি ২০টি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।কোনো কিছুই আসলে সেদিন শেষ রক্ষাটা করতে পারেনি।আজও এ জাহাজ নিয়ে অনেক অজানা রহস্য রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

বৈদ্যুতিক ফ্যান আস্তে চালালে বিদ্যুৎ খরচ কম আর জোরে চালালে কি বেশি খরচ হয়?

Custom Rom(কাষ্টম রম) কি? কিভাবে নিজেই এন্ড্রোয়েড এ কাস্টম রম ইন্সটল করবেন।।।

Best Custom ROM for Xiaomi Redmi Note 8