কুরবানি ও এসময়ে করনীয় _ ইসলামী পোষ্ট :-5

অংশীদারি ভিত্তিতে কোরবানি করার দুটি পদ্ধতি হতে পারে: (এক)সওয়াবের ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়া।যেমন কয়েক জন মুসলিম মিলে একটি বকরি ক্রয় করল।অত:পর একজনকে ঐ বকরির মালিক বানিয়ে দিল।বকরির মালিক বকরিটি কোরবানি করল।যে কজন মিলে বকরি খরিদ করেছিল সকলে সওয়াবের অংশীদার হল (দুই)মালিকানার অংশীদারির ভিত্তিতে কোরবানিদু জন বা ততোধিক ব্যক্তি একটি বকরি কিনে সকলেই মালিকানার অংশীদার হিসেবে কোরবানি করলএ অবস্থায় কোরবানি শুদ্ধ হবে নাঅবশ্য উট, গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি জায়েজ আছে মনে রাখতে হবে কোরবানি হল একটি এবাদত ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের উপায়তাই তা আদায় করতে হবে সময়, সংখ্যা ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত নিয়মাবলি অনুসরণ করেকোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়, শুধু মানুষের উপকার করা নয় বা শুধু সদকা (দান) নয়কোরবানির উদ্দেশ্য হল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি মহান নিদর্শন তার রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করা তাই, আমরা দেখলাম কীভাবে রাসূলুল্লাহ সা. গোশতের বকরি ও কোরবানির বকরির মাঝে পার্থক্য নির্দেশ করলেনতিনি বললেন যা সালাতের পূর্বে জবেহ হল তা বকরির গোশত আর যা সালাতের পরে জবেহ হল তা কোরবানির গোশত ১৩ কোরবানি দাতা যে সকল কাজ থেকে দূরে থাকবেন হাদিসে এসেছে— উম্মে সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করার ইচ্ছে করে সে যেন যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকেইমাম মুসলিম হাদিসটি বর্ণনা করেছেনতার অন্য একটি বর্ণনায় আছে—‘সে যেন চুল ও চামড়া থেকে কোন কিছু স্পর্শ না করেঅন্য বর্ণনায় আছে ‘কোরবানির পশু জবেহ করার পূর্ব পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকবে’ [৩৫] কোরবানি দাতা চুল ও নখ না কাটার নির্দেশে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেনঅনেকে বলেছেন : কোরবানি দাতা হজ করার জন্য যারা এহরাম অবস্থায় রয়েছেন তাদের আমলে যেন শরিক হতে পারেন, তাদের সাথে একাত্মতা বজায় রাখতে পারেন ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : ‘কোরবানি দাতা চুল ও নখ বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি (ত্যাগ) করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে’[৩৬] যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কোরবানি করার ইচ্ছা না করে বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে? সে নিয়ত করার পর থেকে কোরবানির পশু জবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে ১৪ কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মাবলি কোরবানি দাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করবেন, যদি তিনি ভালভাবে জবেহ করতে পারেনকেননা রাসূলুল্লাহ সা. নিজে জবেহ করেছেনআর জবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যমতাই প্রত্যেকের নিজের কোরবানি নিজে জবেহ করার চেষ্টা করা উচিত ইমাম বোখারি রহ. বলেছেন : ‘সাহাবি আবু মুসা আশআরী রা. নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কোরবানির পশু জবেহ করেন’[৩৭] তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েরা কোরবানির পশু জবেহ করতে পারেনতবে কোরবানি পশু জবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েজ আছেকেননা সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সা. তেষট্টিটি কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করে বাকিগুলো জবেহ করার দায়িত্ব আলী রা.-কে অর্পণ করেছেন[৩৮] জবেহ করার সময় যে সকল বিষয় লক্ষণীয় *.(১)যা জবেহ করা হবে তার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে,তাকে আরাম দিতে হবেযাতে সে কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবেহাদিসে এসেছে ,সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত যে নবী কারীম স. বলেছেন : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বিষয়ে সকলের সাথে সুন্দর ও কল্যাণকর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেনঅতএব তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দরভাবে করবেতোমাদের একজন যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং যা জবেহ করা হবে তাকে যেন প্রশান্তি দেয়[৩৯] *.(২)যদি উট জবেহ করতে হয় তবে তা নহর করবেনহর হল উটটি তিন পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে আর সম্মুখের বাম পা বাধা থাকবেতার বুকে ছুরি চালানো হবেকেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:‘সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের উপর তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর’ [৪০] ইবনে আব্বাস রা. বলেন : এর অর্থ হল তিন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আর সামনের বাম পা বাধা থাকবে[৪১] উট ছাড়া অন্য জন্তু হলে তা তার বাম কাতে শোয়াবেডান হাত দিয়ে ছুরি চালাবেবাম হাতে জন্তুর মাথা ধরে রাখবেমোস্তাহাব হল জবেহকারী তার পা জন্তুটির ঘারে রাখবেযেমন ইতিপূর্বে আনাস রা. বর্ণিত বোখারির হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে *.(৩)জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ বলতে হবেকারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘যার উপর আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ) উচ্চারণ করা হয়েছে তা থেকে তোমরা আহার কর’[৪২] জবেহ করার সময় তাকবীর বলা মোস্তাহাবযেমন হাদিসে এসেছে:— জাবের রা. থেকে বর্ণিত … একটি দুম্বা আনা হলরাসূলুল্লাহ স. নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন ‘বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ ! এটা আমার পক্ষ থেকেএবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে’[৪৩] অন্য হাদিসে এসেছে— রাসূলুল্লাহ সা. দুটি শিংওয়ালা ভেড়া জবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন[৪৪] জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর পাঠের পর——(হে আল্লাহ এটা তোমার তরফ থেকে, তোমারই জন্য) বলা যেতে পারেযার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হচ্ছে তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ আছেএ ভাবে বলা—‘হে আল্লাহ তুমি অমুকের পক্ষ থেকে কবুল করে নাও’ যেমন হাদিসে এসেছে আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ স. কোরবানির দুম্বা জবেহ করার সময় বললেন :— ‘আল্লাহ নামে, হে আল্লাহ ! আপনি মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজন এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করে নিন’ [৪৫]

Comments

Popular posts from this blog

বৈদ্যুতিক ফ্যান আস্তে চালালে বিদ্যুৎ খরচ কম আর জোরে চালালে কি বেশি খরচ হয়?

Custom Rom(কাষ্টম রম) কি? কিভাবে নিজেই এন্ড্রোয়েড এ কাস্টম রম ইন্সটল করবেন।।।

Best Custom ROM for Xiaomi Redmi Note 8