একটি অন্যরকম ভালোবাসা।পার্ট:-3
#পার্ট ৩
সেমিস্টার ব্রেক চলছিলো ,তাই কুমিল্লা এসে পরেছি আসার আগে আন্টি বলছিলো তিতলীকে আবার চেকআপ করাবে কোনো নতুন খবর পেলে আমাকে জানাতে বলেছিলাম ,তিতলীকে অনেকগুলো কমিক্স আর কিটক্যাট দিয়ে এসেছিলাম বলেছিলাম হোমওয়ার্ক গুলো সেরে রাখতে ফোকলা দাতে হেসে জবাব দিয়েছিলো "একটাও করবো না, তোমার জন্য রেখে দিবো ভাইয়া"
পাগলীটার মুখে এই কথা শুনে হেসেছিলাম অনেকক্ষণ
দুপুরবেলা ঘুমোচ্ছিলাম , এর মাঝেই আন্টির কল এলোকলটা রিসিভ করতে গিয়ে বুকের ভেতর কোথায় যেনো খচ করে একটা কাঁটা বিধলো
রিসিভ করার পর আন্টির কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলোতিতলী নাকি আই-সি-ইউ তে আছে কাল রাতে হঠাত করেই নাকি ওর কিছু ভালো লাগছিলো না, তাই মায়ের কাছে ঘুমোতে গিয়েছিলোএর মাঝেই হঠাত করে অজ্ঞান , আর তখনি সাথে সাথে হসপিটালে নেয়া হয়
কোনোমতে কান্না থামিয়ে, আম্মুকে বুঝিয়ে রাত ৮টার মাঝেই চলে এলাম তিতলী কে দেখতেআই-সি-ইউ এর দরজার বাইরের কাচ দিয়ে দেখছিলাম আমার ছোটো ঘুমন্ত পরীটাকে তিতার জ্ঞান নেইডাক্তার ও কিছু ঠিকভাবে বলছে না
তিতার আর জ্ঞান ফেরেনিরাত প্রায় আড়াইটায় চলে গেলো তিতা আমাদের ছেড়েকাঁদতে পারছিলাম না কেনো যেনোঅধিক শোকে পাথর এর মতো অবস্থা জমাট বাঁধা চোখে দেখছিলাম আঙ্কেল আর আন্টির অবস্থা
পরদিন বাদ আসর তিতলী কে দাফন করা হলোতিতলী একেবারেই হারিয়ে গেলো তখনআমার মনের অবস্থা টা ঠিক কেমন ছিলো বুঝছিলাম না খুব কাছের মানুষদের হারালে বুঝি এমনই হয় ??? আচ্ছা তিতলী কি আমার খুব প্রিয় মানুষ ছিলো???
তিতলী মারা যাবার প্রায় একমাস পর আন্টি কল করে বাসায় যেতে বললোবাসায় গিয়েই প্রথমবারের মত খালি খালি লাগলো সব ( তিতলীর জন্নেই আসতাম এ বাসায়, আর ও চলে যাবার পর আর এখানে আসার ইচ্ছে হয়নি)
তিতলীর রুমে বসে ওর রেখে যাওয়া বই-খাতা গুলো ঘাটছিলামআমার দেয়া হোমওয়ার্ক গুলো ও সত্যিই কমপ্লিট করে রেখে যায় নি (ও হয়ত জানতো যে, সে যেখানে যাচ্ছে সেখানে এসবের আর প্রয়োজন নেই)
ওর হোমওয়ার্কের খাতার পাতা উল্টাতে গিয়ে দেখলাম একটা পাতায় লেখা "Dear Sir-Bhaiya, would you please keep my photo with Jannat apu's photo in your moneybag after my death?
This is my last wish Sir-Bhaiya
Would you please........???"
মৃত্যু জিনিসটা কি সেটা কি জানতো পাগলী টা ?
তিতা মারা যাবার পর একটু কাঁদতে পারিনিলেখাটা পরে প্রানখুলে কাঁদলাম পাগলের মতোএক মাসের চেয়েও বেশী দিন ধরে জমানো সব কান্না যেনো বের হয়ে এলোআন্টি আঙ্কেল বাসাতেই ছিলো আমাকে কাঁদতে দেখে দুজনেই এসে শান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদে উঠলো কাঁদতে কাদতেই আঙ্কেল বললো , তিতলী মারা যাবার আগেরদিন রাতে এসে ওনাকে ধরে এটা লিখে দেবার জন্য নিজে ঠিকভাবে গুছিয়ে লিখতে পারছিলো না বলেই বাবাকে দিয়ে লিখিয়েছিলো
একথা শুনে কেঁদে উঠলাম আবাররাতে আঙ্কেল আর আন্টির সাথে খেয়ে চলে আসছিলাম বাসায় এমন সময় আন্টি এসে খাম ধরিয়ে দিলো একটা (শেষ যে মাসটায় তিতাকে পড়িয়েছিলাম তার বেতন) .এবার আর টাকাটা নেবার জন্য হাত বাড়াই নিহাত বাড়ালে তিতলী আর আমার সম্পর্কটাকে অবহেলা করা হতোআন্টিকে অনেক বুঝিয়ে টাকাটা ফিরিয়ে দিলাম আর তিতার শেষ হোমওয়ার্ক এর খাতাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম রাস্তায়
তিতলী রে , ক্যামন আছিস তুই ওখানে ? ওখানে কি কেউ তোকে কমিক্স আর কিটক্যাট দেয় রে ? তোকে আমরা সবাই খুব মিস করি রে পাগলীতুই কি বুঝিস সেটা ? যদি বুঝিস তাহলে জবাব দিস না ক্যান ? এখন চুপ করে থাকিস ক্যান তুই ?তখন তো অনেক পকপক করে সবাইকে জ্বালাতি , এখন কেনো না ? তোর আর আমার একটা সেলফি তুলেছিলাম একদিন ,মনে আছে তোর ? ভায়োলেট কালার এর একটা ড্রেস পরা ছিলি তুই , হাতে কিটক্যাট , ফোকলা দাঁতের হাসি দেয়া সেই সেলফিটার কথা কি তোর মনে আছে রে বোন? সেই ছবিটা আমি আমার মানিব্যাগ এ রেখেছিরে, তোর জান্নাত আপুর ছবিটার পাশেই রেখেছিতোর ইচ্ছেটা পূরণ করেছিরে তিতলী
আচ্ছা তিতা , কিছু পাওয়ার চেয়ে হারানোর কষ্ট টা কেনো এতো বেশী বলতে পারবি তুই? তোর আপুর করা ৫টা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ওকে পেয়েছিলাম , অনেক আনন্দ লেগেছিলো কয়েকদিন তবে তোর আপুটাকে হারানোর এতোদিন পরেও কেনো এতো কষ্ট হয় বলতে পারবি ? ৭ হাজার টাকায় যখন তোকে পড়ানোর দায়িত্ব টা পেয়েছিলাম সেই আনন্দটা এক-দেড় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিলো মাত্রতুই চলে গেলি , তোকে হারানোর কষ্টটা যে আমাকে সারাটা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে রে পাগলী কেনো এমন হয় ? তুই আর তোর আপু তো কাছের মানুষ ছিলি না আমার , তবে কেন এতো কাছে এলি তোরা ? কেনো চলে গেলি আবার একা করে ???
তুই ভালো থাকিস তিতা ,যেখানেই থাকিস না ক্যান দোয়া করি রে বোন তোর এই সার-ভাইয়াটা তোকে খুব ভালোবাসেরে তিতা ,খুব ভালোবাসে।
Comments
Post a Comment