MD IMRAN Hossen/মোঃ ইমরান হোসেনের জীবনী
My Life/আমার_জীবনী
আমার নাম মোঃ ইমরান হোসেন।আমার জন্ম ১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর।আমি ছোটবেলা থেকেই একটু ভিন্ন রকমের ছিলাম।গ্ৰামে থাকতাম বলে আর ১০ বা ১২ ছেলের মতো ভালো চালাক ছিলাম না। আমি খুব গরিব ঘরের ছেলে।বাবা পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করতো।আমার এখনো মনে আছে ছোটবেলায় একবার আমার লিভারে সমস্যা হয়েছিল।ভালো চিকিত্সা করাতে পারেনি।আব্বু একটি ছোটখাট দোকান পরিচালনা করতো আর আম্মু বাসায় ছোটভাই,ছোটবোন ও আমায় নিয়ে থাকতো।আমি ছোটবেলায় আমার আম্মুকে খুব কষ্ট দিতাম না।আমরা একসাথে খেলা করতাম।প্ৰায়ই আমাদের মাঝে মারামারি হতো ।এরকম আরো অনেক ঘটনা মনে পরে।জন্মের পর নানুকে চোখে দেখিনি কিন্তু নানি এখনো বর্তমান আছে।এদিকে দাদা-দাদিকেও জন্মের পর দেখিনি।আব্বুরা দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন।তাদের মধ্যে দুই ফুফু ছাড়া অন্যদের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলো না।তখনকার একটি ঘটনা আজও মনে পড়ে।একবার ১১ কিংবা ১২ বছরের সময় ফুফু বাড়িতে বেড়াতে গেলাম।আমি বড়া পিঠা খেতে চাইলাম।দেখি আধা ঘন্টার মধ্যে ফুফু পিঠা তৈরি করে আমাকে খেতে দিলো।তারপর হঠাৎ কয়েকদিন পর শুনলাম সেই ফুফু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
অনেকদিন পর ঢাকায় আমার বড়চাচার বাসায় জীবনের প্ৰথম বেড়াতে গেলাম।চাচি ডাইনি প্ৰকৃতির ছিলো বলে ঠিকমতো আদর পেলাম না।তবে ভাই ও ভাবি (চাচাতো ভাইয়ের বউ) খুব ভালবাসতেন।
তার দুই এক দিনের ভিতর আমার বড়োচাচা কাঠপট্টি বাজার থেকে একটি শার্ট ও প্যান্ট কিনে দিলেন।এক সপ্তাহ পর কাঠপট্টি থেকে লঞ্চযোগে ঢাকা সদরঘাট পৌছলাম।মামা শত ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে সদরঘাট থেকে নিতে আসলেন এবং নিয়ে গেলেন কচুক্ষেত,কান্ট এ তার ভাড়াটে বাড়িতে।মামি গার্মেন্টস এ কাজ করেন।তাদের একটা বাচ্চা তিন মাস বয়সে মারা যায়।পরে আর কোনো বাচ্চা হয়নি।মামা বাড়ি পৌছলে তিনি নিজ দায়িত্বে গোসল করিয়ে মার্কেটে নিয়ে গেলেন এবং পছন্দের জিনিস কিনে দিলেন।মামাও মাঝে মাঝে কাজের জন্য বাইরে যেতেন।কিছুক্ষন পরই আমাকে দেখতে আসতেন।মামা-মামি দুজনই আমাদের তিন ভাইবোনকে ভালবাসতেন।আট,নয় দিন পর আমি গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম।মামা সদরঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসলেন এবং লঞ্চে উঠে তার পরিচিত লোকের পাশে বিছানা করে খাবার কিনে দিয়ে চলে গেলেন।আমার জীবন চলার পথে মেঝো মামা আমাকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন তা অন্য কারও আত্মীয়-স্বজনরা করবেনা।সত্যিই তার এ ঋন শোধ করার মতো না।লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে দিলো কিন্তু মেঘনা নদীতে আসার পরই প্রবল ঝড়-বৃস্টি হতে থাকলো।আমারতো প্রায় কাপুনি উঠে গেছিলো।আল্লাহর রহমতে ঘন্টাখানেক পর ঝড় থামলো,এবং আমি নিশ্চিন্তে ঘুম দিলাম।সকাল ১০ টা নাগাদ লঞ্চ বরগুনা ঘাটে ভিড়লে ছোটমামা আমাকে নিয়ে আসলো।যাহোক আমি সেইদিনই নানা বাড়ি থেকে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম।জীবনের নানা চড়াই-উত্রাই পার হয়ে তখন আমায় প্রথম শ্রেনীতে আমাদের গ্ৰামের কোডেকে ভর্তি করায়।পরে বলতলা সরকারি প্ৰাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্ৰেনীতে ভর্তি হই।সেখান থেকে এ নিয়ে বের হয়ে আমি চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৪.75 পেয়ে এস,এস,সি পাস করি এবং বরগুনা সরকারি কলেজে ভর্তি হই।প্ৰথমে আমি নানাবাড়ি থেকে পড়াশুনা করতাম।নানা মারা যাওয়ায় তাদের উপর দারিদ্ৰতা ছাপ ফেলে।সেখানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরি।ফলে পরে আমি বরগুনায় একবাসায় গৃহশিক্ষক হিসেবে থাকি।খুব ভালো ফ্যামিলি না হলেও মধ্যম পর্যায়ের। সারাদিনে কিছুক্ষন ফেসবুক চালাই আর ইন্টারনেট চালাইয়া সময় কাটে।কিছু বই কিনছি মাঝে মাঝে পড়ি।আর এভাবেই আমার সময় কাটে।আমি ইয়ার ফাইনাল এক্সামে একটি পরিক্ষা দিতে পারি নি।আমি এখন এইস,এস,সি সেকেন্ড ইয়ার এ অধ্যায়নরত আছি।আমি আমার গ্রামের কথা কিছুতেই ভুলতে পারিনা।বিশেষ করে আমার মা-বাবা ও ভাই-বোনকে।বন্ধুদেরও খুব মিস করি।আমার প্ৰায় সমবয়সি কিছু ক্লাশের বন্ধু আছে তাছাড়া পরিচিত (রেজাউল,লিমন,জুয়েল,সোহাগ,আমিনুর ও জসিমসহ আরও অনেকে)।বড়ভাইয়ের মতো ছিলেন হাফেজ মোঃ আতিকুর রহমান আতিকি।জানিনা আবার কবে গ্রামে ফিরে যেতে পারবো।তবে জীবনের এই দুর্দিনে অনেক কিছু শিখলাম।অনেক লোকের আসল চেহারা দেখলাম।
মানুষ বিপদে না পরলে কখনওই বুজতে পারে না তার আশে-পাশের দুনিয়াদারি কেমন।আশা করি এই বিপদ থেকে একদিন না একদিন মুক্তি পাবো।
ইনশাআল্লাহ।
Comments
Post a Comment