ট্রানজিস্টর কাকে বলে | ট্রানজিস্টর কত প্রকার | ট্রানজিস্টর পরিচিতি
ট্রানজিস্টর পরিচিতি: ট্রানজিস্টর হলো ইলেক্ট্রনিক্সের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। এককথায় বলা যায় ট্রানজিস্টর ইলেক্ট্রনিক্সের চাবিকাঠি । ১৯৪৮ সালে ট্রানজিস্টর আবিস্কারের ফলে ইলেক্ট্রনিক্সের বিপ্লব ঘটে। তখন থেকে ইলেক্ট্রনিক্স এমন জগতে পর্দাপণ করে যার অগ্রগতি চলতেই আছে। যার ফলে ইলেক্ট্রনিক্সের নতুন যুগের সূচনা হয়। বর্তমানে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতিটা ডিভাইস এমন ভাবে তৈরী হচ্ছে যেটা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে।
ট্রানজিস্টর কি ?
ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতিটা ডিভাইস দেখতে এতছোট এবং স্মার্ট আকারে করা সম্ভব হচ্ছে তা একমাত্র ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে। আমরা সবাই প্রতিদিন যে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করছি যেমন- ছোট মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, মেমোরি, আইসি, মাক্রো চিপস ইত্যাদি। আপনি জানেন কি এগুলো কিভাবে তৈরী হচ্ছে? ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতিটা ডিভাইস একমাত্র ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরী করা হয়। তাই আজকের বিষয় ট্রানজিস্টর,আশা করছি আজ থেকে আপনাদের ট্রানজিস্টর নিয়ে কোন কনফিউশন থাকবে না। মনোযোগের সাথে আমার সঙ্গে থাকুন।
ট্রানজিস্টর কাকে বলে :
ট্রানজিস্টর হলো ইলেক্ট্রনিক্সের সুইচ যার একপ্রান্তে কারেন্ট প্রবাহ করলে অপর প্রান্তে তা বর্ধিত আকারে পাওয়া যায়। সংজ্ঞাটি ভালো ভাবে দেখলে বোঝা যায় যে ,এখানে দুটি কথা বলা হয়েছে যথা- ১. ট্রানজিস্টর হলো ইলেক্ট্রনিক্সের সুইচ। ২. ট্রানজিস্টরের মধ্যে কারেন্ট প্রবাহ করলে তা বর্ধিত আকারে পাওয়া যায়। এ থেকে পরিস্কার বোঝা যায় ট্রানজিস্টর কি এবং ইলেক্ট্রনিক্সে ট্রানজিস্টরের কি কাজ । সুতরাং যে ডিভাইস দিয়ে ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিটের কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা অর্থাৎ সার্কিটের কোথায় কেমন করেন্ট প্রবাহ হবে এবং তা প্রয়োজন মত বর্ধিত করা যায় তাকে ট্রানজিস্টর বলে।
ট্রানজিস্টরের প্রকারভেদ:
ট্রানজিস্টর সাধারণত দুই প্রকার যথা:-
১। NPN ট্রানজিস্টর। ২। PNP ট্রানজিস্টর।
ট্রানজিস্টর পরিচিতি transistor diagram
১।PNP ট্রানজিস্টর: সব ট্রানজিস্টরের সাধারণত তিনটা পা থাকে, যার নাম ইমিটার-বেস-কালেক্টর, সব সময় ট্রানজিস্টর এই তিনটা নীতিতে কারেন্ট প্রবাহ করে। তবে তার ঐ তিনটা পায়ের পজেটিভ-নেগেটি-পজেভি অর্থাৎ PNP থাকে, যাকে PNP ট্রানজিস্টর বলা হয়। অনেকটা ডায়োডের মত, প্রথমত দুইটা ডায়োড ব্যবহার করে ট্রাজিস্টর আবিস্কার করা হয়েছিল। তাই বলে মনে করবেন না যে ডায়োড দিয়ে ট্রানজিস্ট তৈরী করা হয়, বর্তমানের ট্রানজিস্টর কিন্তু অনেক ভিন্ন।
২। NPN ট্রানজিস্টর: NPN ট্রানজিস্টরেরও সাধারণত তিনটা পা থাকে, যার নাম ইমিটার-বেস-কালেক্টর, সব সময় ট্রানজিস্টর এই তিনটা নীতিতে কারেন্ট প্রবাহ করে। তবে তার ঐ তিনটা পায়ের কাজ আলাদা নেগেটি-পজেভি-নেগেটি- অর্থাৎ NPN থাকে, যাকে NPN ট্রানজিস্টর বলা হয়।
ট্রানজিস্টরের প্রকৃতি:
ট্রানজিস্টর সাধারণত দুই প্রকৃতির হয় যথা-
NPN এবং PNP ট্রানজিস্টর কে আবার ইলেক্ট্রনিক্সে দুই ভাবে ব্যবহার করা হয় যথা-
১। সুইচ হিসাবে ২। অ্যামপ্লিফায়ার হিসাবে
how transistor works ট্রানজিস্টর পরিচিতি
সুইচ হিসাবে ট্রানজিস্টর ব্যবহার:
ট্রানজিস্টর পরিচিতি সুইচ হিসাবে NPN ট্রানজিস্টর : NPN ট্রানজিস্টরের বৈশিষ্ট হলো দুইট পিন নেগেটিভ আর একটা পজেটিভ, পজেটিভ পিনটা বেজ হিসাবে কাজ করে। NPN ট্রানজিস্টরের বেজে কারেন্ট দিলে কালেক্টর থেকে ইমিটারে করেন্ট প্রবাহ হবে। সুতরাং সুইচ হিসাবে কারেন্টের জন্য NPN ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়।
ট্রানজিস্টর পরিচিতি সুইচ হিসাবে PNP ট্রানজিস্টর: PNP ট্রানজিস্টরের বৈশিষ্ট হলো দুইটা পিন নেগেটিভ আর একটা হলো পজেটিভ, পজেটিভ পিনটা বেজ হিসাবে কাজ করে। PNP ট্রানজিস্টরের বেজে কারেন্ট দিলে ইমিটারে কারেন্ট প্রবাহ হবে না। কারেন্টের গতি বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং সুইচ হিসাবে কারেন্টের জন্য PNP ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়।
অ্যামপ্লিফায়ার হিসাবে ট্রানজিস্টর ব্যবহার:
অ্যামপ্লিফায়ার হিসাবে ট্রানজিস্টর : যে ট্রানজিস্টরের বেজে কারেন্ট দিলে তা ইমিটার ও কালেক্টরে বর্ধিত আকারে পাওয়া যায় তাকে অ্যামপ্লিফায়ার ট্রানজিস্টর বলে। এটা ব্যবহার করা হয় অনেক লো-সিগন্যাল কারেন্টকে হাই-সিগন্যাল করার জন্য।
ট্রানজিস্টর আবিস্কার :
১৯৪৮ সালে আমেরিকার বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরীর তিন জন বিজ্ঞানী জে.বারডিন, ডাব্লুউ.এইচ.ব্রাটেন এবং ডাব্লুউ মিলে ডায়োড ব্যবহার করে প্রথম ট্রানজিস্টর আবিষ্কার করে ইলেক্ট্রনিক্সের অগ্রগতির এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে। যা বর্তমানে আমরা দেখছি ইলেক্ট্রনিক্সের বিপ্লব। তখন থেকে ইলেক্ট্রনিক্সে ট্রানজিস্টর বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার শুরু হয়। শুধু ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে একসময় বিজ্ঞানীরা রেডিও আবিষ্কার করে ফেলে। যার সূত্র ধরে টিভি, টেলিফোল, মোবাইল, ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়ে যায় তাহলে সহজেই বোঝেই যাই যে ইলেক্ট্রনিক্সে ট্রানজিস্টরের অবদান কি।
ইলেক্ট্রনিক্সে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার:
ট্রানজিস্টর পরিচিতি transistor diagram
বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতিটা ডিভাইসে হাজার হাজার নয় লক্ষ লক্ষ ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয়। ভবিষৎতে তা দ্বিগুন হরে বেড়েই চলবে। আমরা যে ছোট মেমোরি, আইসি ব্যবহার করি, কিন্তু কখনো ভেবেছেন? যে এটা কিভাবে তৈরী হয়েছে। সামান্য দেখতে ছোট্ট মেমোরী, যেটা তৈরী করতে লক্ষ লক্ষ ট্রানজিস্টর ব্যবহার করা হয় যেগুলো খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়।তাহলে বোঝয় যায় যে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার কোথায় হয়। এককথায় বলা যায় ট্রানজিস্টর ছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স জগৎ অচল। তাই ইলেক্ট্রনিক্স সম্পর্কে জানতে হলে ভালোভাবে ট্রানজিস্টরকে জানতে হবে।
বর্তমানে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার:
ইলেক্ট্রনিক্সের যত ছোট চিপস্ আছে যেমন কম্পিউটারের প্রসেসর, র্যাম, মাদার বোর্ডের আইসি, মোবাইলের মাদার বোর্ড, আইসি, মেমোরী, ক্যামেরা ইত্যাদি যত ছোট ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস আছে সবগুলো ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে তৈরী করা হয়। এজন্য বলা যায় ইলেক্ট্রনিক্সে ট্রানজিস্টরের ভূমিকা অনেক বেশি।
ট্রানজিস্টর দুইভাবে কাজ করে যথা-
১। গতিরোধক হিসাবে। ২। গতিবর্ধক হিসাবে।
১। গতিরোধক হিসাবে : ট্রানজিস্টর এমন একসুইচ মিনিটে হাজার হাজার বার অন-অফ করা যায় এটা কোন সাধারণ সুইচ নয়। সার্কিটের কোথায় কখন কত তাড়া-তাড়ি কিভাবে কারেন্ট অন-অফ করতে হবে তা ট্রানজিস্টর দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। ট্রানজিস্টর ছাড়া এত ফাস্ট কাজ করে এমন কোন ডিভাইস ইলেক্ট্রিনিক্সে নেই। তাই ট্রানজিস্টর কে ইলেক্ট্রনিক্সের সুইচ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
২। গতিবর্ধক হিসাবে: ইলেক্ট্রনিক্সের সার্কিট ভালো ভাবে লক্ষ করলে দেখবেন যে সার্কিটের বিদ্যুৎ প্রবাহকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। অর্থাৎ অনেক বড় কানেকশন লাইন অতিক্রম করে তার গন্তব্যে পৌছাতে কারেন্টের গতি কমে আসে তখন সেখানে কারেন্টের গতিবর্ধক হিসাবে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার করা হয়। এটা দুই ডায়োডের মত কাজ করে তবে ডায়োড নয়।
ট্রানজিস্টর পরিক্ষা করার নিয়ম:
ট্রানজিস্টরের নেগেটিভের সাথে মিটারের নেগেটিভ সংযোগ দিয়ে অন্য দুইটা পিনে মিটারের পজেটিভ সংযোগ দিয়ে দেখতে হবে যে, মিটারের ওহম বাড়ছে কি-না, যদি বাড়ে তাহলে বুঝবেন ট্রনজিস্টর ঠিক আছে। তার পর আবার উলট-পালট করে দেখবেন মিটারের কাটা নড়ে কি-না, যদি দেখেন উলট-পালট করলেও মিটারের ওহম বাড়ছে তাহলে বুঝবেন ট্রানজিস্ট্রর খারাপ। মোট কথা শুধু একদিকে সংযোগ দিলে ট্রানজিস্টরের ইমিটার ও কালেক্টরের ওহম গতি বাড়বে। ভালো ট্রানজিস্টরের কোন মতেই বিপরিতে বাড়বে না।
NPN না PNP ট্রানজিস্টর কিভাবে বুঝবেন:
অ্যাভোমিটারের মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রানজিস্টরের NPN ও PNP বের করা যায়, আপনি পরীক্ষা করার নিয়ম শেখার জন্য প্রথমে একটি ভালো ট্রানজিস্টর নিবেন এবং একটি অ্যাভোমিটার নিবেন, তারপর ট্রানজিস্টরের যেকোন প্রান্তে মিটারের সংযোগ দিয়ে দেখবেন কোন পিনে সংযোগ দিলে অন্য দুইটা পিনে মিটারের সংযোগ পাই। যদি দেখেন অন্য পিনে সংযোগ দিলে মিটরের ওহম বাড়ছে তাহলে যেভাবে আপনি সংযোগ দিয়েছেন সেইভাবে দেখুন নেগেটিভ-পজেটিভ-পজেটিভ হবে।
মিটারের একটা পিন ট্রানজিস্টরের একটা পিনে লাগানোর পরে অন্য দুইটা পিনে সংযোগ দিলে কাজ করলে বুঝবেন, আপনার একটা পিনে যে সংযোগ দেওয়া আছে মনে করুন সেটা পজেটিভ তাহলে বাকি দুইটা নেগেটিভ হবে সহজ হিসাব। আপনি যদি বুঝতে না পারেন তাহলে আমাকে কমেন্ট করুন। ট্রানজিস্টর পরিক্ষা করা নিয়ে আমি একটা ভিডিও তৈরী করে দিবো যেন আপনাদের বুঝতে সহজ হয়।
ট্রানজিস্টর পরিচিতি :
বর্তমানে ব্যবহৃত আরো কিছু ট্রানজিস্টর রয়েছে যথা-
ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (Field Effect Transistor): এটা একধরনের ট্রানজিস্টর তবে সাধারণ ট্রানজিস্টর থেকে একটু ভিন্ন। সাধারণ ট্রানজিস্টর দুই ধরণের মেটারিয়াল দ্বারা তৈরী করা থাকে যেমন –হোল এবং ইলেক্ট্রন দ্বারা, কিন্তু ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টরে যে কোন একধরনের মেটারিয়াল ব্যবহার করে তৈরী করা হয়। হতে পারে ইলেক্ট্রন নতুবা হোল।ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর দুই ধরণের হয় যথা ১। N চ্যানেল ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর, ২। P চ্যানেল ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর।
ইউনি জাংশন ট্রানজিস্টর (Uni Junction Transistor): এটিও একধরণের ট্রানজিস্টর এটার একটা বৈশিষ্ট্যহলো কিছু নির্দিষ্ট সময় এর ইমিটারে কারেন্ট খুব দ্রুত বাড়ানো যায়। এই বৈশিষ্ট্য কারণে একে স-টুথ জেনারেটর তৈরী করতে বেশি ব্যবহার করা হয়।ইউনি জাংশন ট্রানজিস্টরের কারেন্টের আউটপুট ভোল্টেজ অনেকটা কারাতের মত দেখতে হয়।
সিলিকন কন্টোল রেক্টিফায়ায় (Silicone Control Rectifier) : ট্রানজিস্টর রেক্টিফায়ার থেকে তৈরী হয়েছে, হয়ত আপনারা জেনে গেছেন। তাই দেখবেন ট্রানজিস্টর সব সময় দুইটা রেক্টিফায়ারের গঠন অনুসারে কাজ করে। সিলিকন কন্টোল রেক্টিফায়ায় হলো PNP এবং NPN ট্রানজিস্টরের সাথে আরেকটি ক্রিষ্টাল N টাইপ অথবা P টাইপ ব্যবহার করা হয় যেমন- PNPN অথবা NPNP হয়। এসম্পর্কে আমার আরেকটি আর্টিক্যাল থাকবে আসা করি আপনারা দেখে নিবেন। ট্রানজিস্টর হলো ডায়োডের অ্যাডভান্স ব্যবহার, তাই ট্রানজিস্টরকে ভালোভাবে জানতে হলে আগে ডায়োড কি তা ভালোভাবে জানতে হবে।
বিকল্প ট্রানজিস্টরের ব্যবহার:
অনেক সময় কোন প্রজেক্ট করতে গিয়ে দেখা যায় যে ডায়াগ্রামের ট্রানজিস্টর পাওয়া যাচ্ছেনা সেজন্য অনেক সময় সে প্রজেক্ট করা বন্ধ করে দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ট্রানজিস্টরের বিকল্প ব্যবহার করা যায়। গুগলে খোঁজ করলে অনেক পাবেন। এর মধ্যে আমি কিছু আপনাদের জন্য খুঁজে দিলাম:
ট্রানজিস্টর কোড :
এগুলো একটার পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহার করা যাবে
BC547 BC147, BC148, BC149, BC548, BC549
BC2008 BC107, BC109, BC207, BC209, BC182, BC183, BC184
BC157 BC158, BC159, BC327, BC177, BC157, BC170, BC170, BC179, BC213, BC2013
AC 107 AC117, AC128, AC188, AC151, OC303
Comments
Post a Comment