বেসিক ইলেকট্রিক্যাল নলেজ (পর্ব ০১)





বেসিক ইলেকট্রিক্যাল নলেজ পর্ব-১ এ থাকছে
কারেন্ট কাকে বলে
বিদ্যুৎ কত প্রকার ও কি কি
পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে, এর উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে, এর উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে, এর উদাহরণ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার
ওহমের সূত্রের ব্যাখ্যা
এবং ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা



কারেন্ট কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?
কোনো বৈদ্যুতিক বর্তনীতে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে একক সময়ে ইলেকট্রন প্রবাহকে বৈদ্যুতিক কারেন্ট বলে। অন্য ভাবে বলা যায় যে, কোনো পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে বৈদ্যুতিক কারেন্ট বলে। সহজ কথায়, পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহের হারকে কারেন্ট বলে।

কারেন্টের একক ও প্রতীক: কারেন্ট একটি পরিমাপক রাশি। কারেন্টের একক অ্যাম্পিয়ার। একে ইংরেজি লেটার I দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অ্যামিটারের সাহায্যে কারেন্ট পরিমাপ করা হয়।

কারেন্ট কত প্রকার ও কি কি
কারেন্ট প্রধানত দুই প্রকার। যথা:

(ক) স্থির বিদ্যুৎ: যে বিদ্যুৎ স্থান পরিবর্তন করে না এবং উৎস স্থলেই থেকে যায় তাকে স্থির বিদ্যুৎ বলে। ঘর্ষণের ফলে এ বিদ্যুতের উৎপত্তি হয়। দুই হাতের তালু দিয়ে ঘর্ষণের ফলেও এই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

(খ) চল বিদ্যুৎ: এই বিদ্যুৎ উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হতে পারে।

প্রবাহ অনুসারে চল বিদ্যুৎ আবার দুই প্রকার। যথা:

(ক) ডি.সি কারেন্ট: যে কারেন্টের মান ও দিক সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না তাকে ডি.সি বা (Direct Current) বলে।

(খ) এ.সি কারেন্ট: যে কারেন্টের মান ও দিক সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাকে এ.সি বা (Alternating Current) বলে।


ইলেকট্রিক্যাল একক
(ক) সি.জি.এস বিদ্যুৎ একক: সিজিএস পদ্ধতিতে চার্জের একককে স্থির বিদ্যুৎ একক বলে। ১ স্থির বিদ্যুৎ একক = ৩.৩৩×১০১০ অ্যাম্পিয়ার।

(খ) সি.জি.এস বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় একক: কোনো পরিবাহীর কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে চুম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। সিজিএস পদ্ধতিতে চুম্বকক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহের একককে সিজিএস বিদ্যুৎ চুম্বকীয় একক বলে। ১ বিদ্যুৎ চুম্বকীয় একক = ১০ অ্যাম্পিয়ার।

(গ) আন্তর্জাতিক একক: কারেন্ট পরিমাপের আন্তর্জাতিক একককের নাম আন্তর্জাতিক অ্যাম্পিয়ার। আন্তর্জাতিক একক হিসেবে বিশ্বে যে একক সর্বাধিক প্রচলিত তাকে আন্তর্জাতিক একক বলে। ১ আন্তর্জাতিক অ্যাম্পিয়ার = ০.৯৯৯৮৩৫ অ্যাম্পিয়ার।


(ঘ) ব্যবহারিক একক: ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যে একক ব্যবহৃত হয়, তাকে ব্যবহারিক একক বলে। কারেন্টের ব্যবহারিক একক অ্যাম্পিয়ার, একে “A” দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ খুব সহজেই হয়, বিশেষ কোনো বাঁধার সম্মুখীন হয় না তাকে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ বলে। সাধারণত সব ধাতুই কম-বেশি ভালো বিদ্যুৎবাহী। যেমন- রূপা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মাটি, প্রাণীদেহ, কার্বন, কয়লা পরিবাহকের কাজ করে।

পরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য
নিম্নমানের আপেক্ষিক রেজিস্ট্যান্স থাকতে হবে।
নিম্নমানের তাপমাত্রা সহগ হতে হবে।
ক্ষয়রোধক ক্ষমতা বা স্থায়িত্ব হতে হবে।
যান্ত্রিক টান সহন ক্ষমতা বেশি থাকতে হবে।
নমনীয়তাসম্পন্ন গুণ থাকতে হবে।
মরিচা প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে হবে।
সোল্ডারিং করার উপযুক্ততা থাকতে হবে।
পরিবাহী পদার্থের তালিকা নিম্নরূপ

নিচে কিছু পরিবাহী পদার্থের নাম দেয়া হলো।

 পরিবাহী পদার্থ
১ সোনা
২ রূপা
৩ তামা
৪ অ্যালুমিনিয়াম
৫ ক্যাডমিয়াম
৬ লোহা
৭ পিতল
৮ টিন
৯ দস্তা
১০ টাংস্টটেন
১১ সীসা
১২ পারদ

পরিবাহী পদার্থের ব্যবহার
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ব্যবহার নিচে দেয়া হলো।

(ক) রূপা: রূপার দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি হওয়ায় এর ব্যবহার খুব কম হয়। প্রধানত ওয়াট-আওয়ার মিটারের কম্যুটেটরে, কার্টিজ ফিউজ ও কিছু কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির কন্টাক্টরে রূপা ব্যবহার করা হয়।

(খ) তামা: মোটর রি-ওয়াইন্ডিংয়ে সুপার এনামেল কপার ওয়্যার, বিদ্যুতিক ক্যাবল, জেনারেটরের কম্যুটেটর এবং ওভারহেড লাইনে তামার তার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

(গ) অ্যালুমিনিয়াম: তামার তারের তুলনায় দামে সস্তা বলে বর্তমানে ওভারহেড লাইনে ও ভূ-নিম্নস্থ লাইনে অ্যালুমিনিয়াম তার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

(ঘ) সীসা: ক্যাবলের আবরণ, ফিউজ তার, ব্যাটারির প্লেট ইত্যাদি তৈরিতে সীসা ব্যবহার করা হয়।

(ঙ) পারদ: অ্যাম্পিয়ার আওয়ার মিটার, মার্কারি ভ্যাপার ল্যাম্প, মার্কারি আর্ক রেক্টিফায়ার ও রিলের ভিতরে পারদের ব্যবহার দেখা যায়।

(চ) লৌহ ও স্টীল: লোহা ও স্টিলের ব্যবহার সীমাবদ্ধ। তবে এটি সাহায্যকারী কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।

অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ সহজে চলাচল করতে পারে না, প্রবাহ পথে অনেক বেশি বাধার সম্মুখীন হয় তাকে অপরিবাহী পদার্থ বলে। অপরিবাহী পদার্থের মধ্যে তড়িৎপ্রবাহ তুলনামূলক ভাবে খুব কম হয়, যাকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা বলে।

বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য
উচ্চমানের ইন্সুলেশন রেজিস্ট্যান্স।
ক্ষয়রোধক ক্ষমতা বা স্থায়িত।
উচ্চমানের ডাই-ইলেকট্রিক ক্ষমতা।
যান্ত্রিক ক্ষমতা।
বাতাসে আর্দ্রতা শোষণে অক্ষমতা।
মরিচা প্রতিরোধ ক্ষমতা।
অপরিবাহী পদার্থের তালিকা

অপরিবাহী পদার্থ
১ এবোনাইট
২ অ্যাসবেসটর
৩ কাঁচ
৪ ব্যাকেলাইট
৫ মাইকা
৬ শুষ্ক কাগজ
৭ পলিথিন
৮ চীনামাটি
৯ রাবার



বিভিন্ন প্রকার অপরিবাহী পদার্থের ব্যবহার

(ক) অ্যাসবেসটর: এটি একটি সাদা রংঙের আঁশযুক্ত অদাহ্য খনিজ পদার্থ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ইনস্যুলেশন করার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার জন্য উত্তাপক বস্তুুসামগ্রীতে এটি ব্যবহৃত হয়।

(খ) মাইকা: এর ডাই-ইলেক্ট্রিক ক্ষমতা খুব বেশি। এটি অদাহ্য বস্তুু হওয়াই উত্তাপক বস্তুুসামগ্রীতে ইনসুলেশন কাজে এর ব্যবহার হয়। যথা- হিটার, হট-প্লেট, ইস্ত্রি, ডায়নামো ও মোটরের কম্যুটেটরে ইনসুলেশন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

(গ) কাঁচ: সাধারণভাবে কাঁচ একটি ভালো অপরিবাহী পদার্থ। বাল্ব ও বাতির আবরণের জন্য কাঁচ বেশি ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ সরাসরি লাইনেরও অনেক সময় কাচের ইন্সুলেটর ব্যবহার করা হয়।

অর্ধপরিবাহী কাকে বলে
যে সকল পদার্থের কারেন্ট পরিবহন ক্ষমতা পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি, সে সকল পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর বলে।

অর্ধপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ

১. সিলিকন
২. জার্মেনিয়াম
৩. ক্যাডমিয়াম
৪.গ্যালিয়াম
৫.সালফাইড ইত্যাদি।

অর্ধপরিবাহী পদার্থ কত প্রকার ও কি কি
অর্ধপরিবাহী পদার্থ সাধারণত দুই প্রকার। যথাঃ
১. খাঁটি সেমিকন্ডাক্টর
২. ভেজাল সেমিকন্ডাক্টর

আবার, ভেজাল সেমিকন্ডাক্টর দুই প্রকার। যথাঃ
১. পি- টাইপ সেমিকন্ডাক্টর ( P- Type Semiconductor)
২. এন- টাইপ সেমিকন্ডাক্টর ( N- Type Semiconductor)

অর্ধপরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য
১. অর্ধপরিবাহীর সাথে কোন অপদ্রব্য যোগ করলে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
২. নিদিষ্ট তাপমাত্রায় পৌছানো পর্যন্ত এর রেজিস্ট্যান্স তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে কমে যায়।
৩. পরমশূন্য তাপমাত্রায় এরা অন্তরকের মতো কাজ করে।
৪. অর্ধপরিবাহীর পরিবহন ব্যান্ড ও যোজন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তি পার্থক্য 1.1eV বা এর থেকে কম।

ওহমের সূত্র সম্পর্কে আলোচনা
জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী জর্জ সাইমন ওহম ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ফুরিয়ারের তাপ পরিবহন সংক্রান্ত গবেষণার উপর ভিত্তি করে বতর্নীর তড়িৎ পরিবহনের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সূত্রটি ও‍’মের সূত্র নামে পরিচিত। এ সূত্রটি পরিবাহীর দু’প্রান্তের বিভব পার্থক্য, তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা এবং রোধের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। 1781 সালে, জর্জ সাইমন ওহমের কাজের আগে হেনরি ক্যাভেনডিস লেনডেন জার এবং কাচের নলগুলির বিভিন্ন ব্যাস এবং লম্বা দ্রবীভূত ভঙ্গুর দৈর্ঘ্যের সাথে পরীক্ষা করেছিলেন।তিনি তার শরীরের সাথে বর্তনী সম্পন্ন হিসাবে তিনি অনুভূত কিভাবে একটি দৃঢ় শঙ্কিত মন্তব্য দ্বারা।

এ সময় তিনি অন্যান্য বিজ্ঞানীকে তার ফলাফলের সাথে যোগাযোগ করান নি, এবং ১৮৭৯ সালে ম্যাক্সওয়েল তাদের প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তার ফলাফল অজানা ছিল। ওম ১৮২৫ এবং ১৮২৬ সালের মধ্যেই তাঁর প্রতিরোধের কাজটি করেন।পরীক্ষার জন্য, তিনি প্রথমে ভোল্টাইক পিল ব্যবহার করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে এটি একটি তাপদ্বয় ব্যবহার করতেন কারণ এটি অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধের এবং ধ্রুবক ভোল্টেজের ক্ষেত্রে আরও স্থিতিশীল ভোল্টেজ উৎস প্রদান করেছিল।

ওহমের সূত্রের ব্যাখ্যা
❝তাপমাত্রা স্থির থাকলে কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত হয় তা ঐ পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক।❞
সমানুপাতিক বলতে বুঝায় যদি পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য দ্বিগুণ করা হয়, তবে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ দ্বিগুণ হবে। আবার, যদি পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য এক-তৃতীয়াংশ করা হয়, তবে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহও এক-তৃতীয়াংশ হবে।

মনে করি, AB একটি পরিবাহী তার। এর দুই প্রান্তের বিভব যথাক্রমে VA এবং VB।

যদি VA > VB হয়, তাহলে পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য হবে V = VA–VB। এখন স্থির তাপমাত্রায় পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ I হলে,

ও’মের সূত্রানুসারে,

I ∝ V

V/I = R = ধ্রুবক

এই ধ্রুবককে ঐ তাপমাত্রায় ঐ পরিবাহীর রোধ বলে।

(I=V/R যেখানে, I=কারেন্ট, V= ভোল্টেজ, R= রেজিস্ট্যান্স)

ওহমের সূত্রের সীমাবদ্ধতা কী?
১. ওহমের সূত্র DC এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, AC এর ক্ষেত্রে নয়।
২. তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৩. তাপমাত্রা স্থির থাকলেও সিলিকন কার্বাইডের ক্ষেত্রে ওহমের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
৪. জটিল সার্কিট সমূহ ওহমের সূত্রের সাহায্যে সমাধান করা যায় না।

Comments

Popular posts from this blog

বৈদ্যুতিক ফ্যান আস্তে চালালে বিদ্যুৎ খরচ কম আর জোরে চালালে কি বেশি খরচ হয়?

Custom Rom(কাষ্টম রম) কি? কিভাবে নিজেই এন্ড্রোয়েড এ কাস্টম রম ইন্সটল করবেন।।।

Best Custom ROM for Xiaomi Redmi Note 8