সূর্যের আলোতে পৃথিবী আলোকিত হলেও মহাকাশ কেনো অন্ধকার থাকে??



প্রাচীনকাল থেকে এখনও পর্যন্ত মহাকাশ হলো মানুষের কাছে একটি কৌতূহলের বিষয়। প্রত্যেক সভ্যতা ও মানুষ সবসময় মহাকাশকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে দেখেছে। কেউ যদি আমাদের মহাকাশ বা মহাশূণ্য নাম উচ্চারণ করে তখন মহাকাশ বলতে আমাদের চোখের সামনে এক অন্ধকার জগতের কথা ভেসে ওঠে যেখানে সূর্যকে কেন্দ্র করে আমাদের এই পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ ঘুরতে থাকে। সূর্যের আলোতে আমাদের এই পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ আলোকিত হয়।এমনকি আমাদের এই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদও এই সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। কিন্তু যে সূর্যের আলোতে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ,উপগ্রহ আলোকিত হয় সেই সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান বা পুরো মহাকাশ থাকে অন্ধকার। এর কারণ কি?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আপনাকে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সবার আগে বলি মহাকাশ কাকে বলে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে মহাকাশ হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের অনন্ত স্থান। আর
অন্ধকার বলতে সাধারণত আলোর অনুপস্থিতি বুঝায়। এখন আমাদের জানতে হবে আমরা কিভাবে কোনো বস্তুকে চোখে দেখতে পাই। আমরা তখনি কোনো বস্তুকে দেখতে পাই যখন কোনো বস্তুর উপর আপতিত আলোকরশ্মি ঐ বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে। আমরা জানি যে, মহাকাশ অর্থাৎ সূর্য থেকে অন্যান্য গ্রহ বা গ্রহ থেকে গ্রহ, এদের মাঝখানে মহাশূন্য । সহজ কথায় এ মহাবিশ্বের এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার। যা আলো প্রতিফলন করে না।
যার মানে হলো এমন কোনোকিছু নেই যার থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসতে পারে। যাতে আমরা দেখবো। যদি থাকতো, তাহলে আমরা অবশ্যই দেখতাম। মহাকাশ থেকে আমরা পৃথিবী ও চাঁদকে খুব স্পষ্ট দেখতে পাই কারণ পৃথিবী ও চাঁদ সূর্যের দ্বারা নির্গত হওয়া প্রচুর পরিমাণে আলোক প্রতিফলিত করে।
এই ব্যাখ্যাটি আরেকটু জটিল করে বুঝার চেষ্টা করব আমরা।
প্রাচীনকালে মানুষ মনে করত আমাদের এই মহাজগৎ হলো স্ট্যাটিক (স্থির)।
এই মহাজগতে ১০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে। প্রতি গ্যালাক্সি গড়ে ১০০ বিলিয়ন স্টার (তারা) রয়েছে। এই হিসাবে এই মহাজগতে ১ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন স্টার (তারা) আছে। এই দিক থেকে চিন্তা করলে তারাদের আলোয় মহাকাশ আলোকিত হওয়ার দরকার ছিল এবং সব জায়গায় আলো থাকা উচিত ছিল।রাত নামক কোনো কনসেপ্টের প্রয়োজনই ছিল না। এটি উলবারছ প্যারাডক্স নামে পরিচিত। হাবেলের মতে, আমাদের এই মহাজগৎ অনবরত সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং এটি হলো অসীম।
যার ফলে তারাগুলোও অনবরত দূরে সরে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২২০০০ তারার(স্টার) ভিজিবিলিটি হারিয়ে যাচ্ছে এই পৃথিবী থেকে। এই তারাগুলো থেকে আলো আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছাতে কয়েক আলোকবর্ষ সময় লেগে যায়। ধরুন আপনার এক বন্ধু একটি মরুভূমিতে আছে এবং আগুন জ্বলালেন। এই আগুনে কিন্তু পুরো মরুভূমি আলোকিত হবে না । এবার ধরুন অনেক অনেক দূরে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু আপনি শুধু দূরে আলোর একটি ঝলক দেখতে পারবেন কিন্তু আপনার ও আগুনের প্রজ্বলনের মধ্যবর্তী পুরো পথটা অন্ধকার দেখবেন।এবার আপনার জায়গায় পৃথিবীকে এবং আগুনের জায়গায় তারা (স্টার) রাখুন। পৃথিবী থেকে আপনি তারা দেখতে পারছেন কিন্তু ঐ তারার আশেপাশের এলাকা কিন্তু অন্ধকার অর্থাৎ মহাকাশ কিন্তু অন্ধকার। আমাদের এই মহাজগৎ অনবরত সম্প্রসারিত হচ্ছে। যার ফলে তারাগুলোও অনবরত দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে তারা থেকে নির্গত এই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও বেড়ে যায়। ফলে এটি দৃশ্যমান আলো থেকে ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও মাইক্রোওয়েভ এ রুপান্তিত হয় যা আমরা চোখে দেখতে পারি না।
তবে পরিশেষে একটি কথা বলা যায় এই মহাকাশ অন্ধকার বলে আমরা রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। মহাকাশ যদি অন্ধকার না হতো তবে পৃথিবীর কোনো অংশে রাত হতো না,আজীবন দিন থাকতো।

Comments

Popular posts from this blog

বৈদ্যুতিক ফ্যান আস্তে চালালে বিদ্যুৎ খরচ কম আর জোরে চালালে কি বেশি খরচ হয়?

Custom Rom(কাষ্টম রম) কি? কিভাবে নিজেই এন্ড্রোয়েড এ কাস্টম রম ইন্সটল করবেন।।।

Best Custom ROM for Xiaomi Redmi Note 8